মধ্যপ্রাচ্যের প্রসব যন্ত্রণা ছিল তীব্র। সুতরাং এটি পরিষ্কার ছিল যে, এটি একটি প্রক্সি যুদ্ধ। আমেরিকান কৌশলটি ছিল সামরিক ও সাংস্কৃতিক কৌশলের সংমিশ্রণ, যেমন- পবিত্র স্থানগুলোতে আক্রমণ করা, কোরআন পোড়ানো এবং ক্রুসেড, যার সমস্ত লক্ষ্য ছিল ইসলাম এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা। অবশেষে বুশ ময়দান ত্যাগ করে এবং কোনকিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
ইরাকেও হাজী কাসেম ও অন্যান্যদের ভূমিকা সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনায় অত্যন্ত কার্যকরী ছিল। আমেরিকানরা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগে ছিল এবং বুশের তিন-চারটি লক্ষ্য ছিল যেমন, রাষ্ট্র গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং ইসলামী বিপ্লবকে উৎখাত ও এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা, যাতে চার বছর ধরে বিশাল পরিমাণ ব্যয় করে অবশেষে ময়দান থেকে পিছু হটে যায়। অর্থাৎ ইরাকের অভ্যন্তরে প্রায় ছয় থেকে সাত ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং চার হাজার লোককে হত্যা করে এর বিনিময়ে তারা কিছুই অর্জন করতে পারে নি। আফগানিস্তানেও তাদের একই পরিস্থিতি, দুই দশক সেখানে কাটানোর পরেও সেখান থেকে কিছুই অর্জন করতে পারে নি। আমেরিকার বিরুদ্ধে হাজী কাসেমের পরিকল্পনা দুই-একটি বিষয়ে নয়।
আমেরিকানরা ইরাকে শীয়া নামধারী ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের আধিপত্য কামনা করেছিল। কিন্তু কোন কারণে এই ঘটনা ঘটেনি এবং ঐ সময়ে নূরে আল মালিকি প্রধানমন্ত্রি হয়েছিলেন, যা এমন একটি ঘটনা ইতিহাস যার সম্পর্কে অবশ্যই লিখবে এবং বর্ণনা করবে যে, খুব জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল এবং হাজী কাসেম সোলাইমানি এমন সব কাজ সম্পাদন করেছিল যাতে ইরাক একটি রাষ্ট্র হিসেবেই থাকে এবং আমেরিকার অধীনে যেন না থাকে এবং বিধর্মীরা যেন ক্ষমতায় না আসে, যাতে মার্কিনিদের সব পরিশ্রম বৃথা হয়।
জনাব বুশ বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, এখানে প্রত্যক্ষ সামরিক যুদ্ধ ফলপ্রসু নয় তাই ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে আমেরিকা তার কৌশল পরিবর্তন করে সরাসরি যুদ্ধ থেকে প্রক্সি যুদ্ধতে রুপান্তর করেছিল এবং প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরে পরিবর্তীত হয়েছিল যা খুবই ভয়ঙ্কর রূপধারণ করেছিল। যা কয়েকটি দেশের সেনাবাহিনী যেমন মিশর, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সেনাবাহিনীর মতো বেশ কয়েকটি সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। ইসলামী বিশ্বের অর্থ, জনশক্তি এবং অস্ত্র ব্যয় করে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। এমতাবস্থায় এই আচরণগুলির মোকাবেলায় ইরানের কী ভূমিকা ছিল? এক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং প্রক্সি যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রে ইরানিরা তাদের নিজস্ব লক্ষ্যে ছিল এবং আমেরিকানরা তাদেরকে সরাসরি মঞ্চে আনতে চেয়েছিল।
সাদ্দাম কর্তৃক কুয়েত দখলের পর আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করেছিল তখন সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য সর্বোচ্চ নেতাকে লিখেছিলেন যে, তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আমাদের সাদ্দামকে সাহায্য করা উচিৎ। সর্বোচ্চ নেতার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সাদ্দামের সাথে মার্কিন যুদ্ধ ছিল শকুনের যুদ্ধ এবং এটা সবচেয়ে দূরদর্শি ব্যবস্থাপত্র ছিল যা তিনি দিয়েছিলেন। প্রক্সি যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধ ইসলামী বিশ্বের উপর চাপানো হয়েছিল এবং সিরিয়া ও ইরাক এই গৃহযুদ্ধ ও প্রক্সি যুদ্ধের জন্য বিধ্বস্ত হয়েছিল। অর্থ, অস্ত্র, এবং বাহিনী নিয়ে আমেরিকানদের নেতৃত্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরও কিছু দেশ আইএসআইএলকে লেলিয়ে দিয়েছিল এবং তারা ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছিল এবং এই সংঘাতকে সিরিয়ায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল।